১. খাদ্য নিরাপত্তা ও সারের ব্যবহার
এই বিভাগে খাদ্য নিরাপত্তার মৌলিক ভিত্তি এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান সারসমূহের (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম) কাজ ও গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে।
ক. খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি
খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি তিনটি:
- খাদ্য প্রাপ্তি (প্র)
- খাদ্য গ্রহণের সামর্থ্য (স)
- খাদ্যের সঠিক ব্যবহার (ব)
মনে রাখার কৌশল (ট্রিক)
প্রসব (প্রাপ্তি, সামর্থ্য, ব্যবহার)
খ. সারের ব্যবহার
উদ্ভিদের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণের জন্য N, P, K সমৃদ্ধ সার লাগে।
| উপাদান | প্রধান সার | কাজ |
|---|---|---|
| নাইট্রোজেন (N) | ইউরিয়া (৪৬% N) (NH2 · CO · NH2) | উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে |
| ফসফরাস (P) | TSP | মূলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে |
| পটাশিয়াম (K) | মিউরেট অফ পটাশ | ফুল ও ফলের উৎপাদনে সাহায্য করে |
মনে রাখার কৌশল (ট্রিক)
N P K - বৃদ্ধিমূল ফুল ফল
২. খাদ্যে বিষক্রিয়া ও পচন
খাদ্য কেন নষ্ট হয় এবং কোন পরিবেশে খাদ্য দ্রুত পচে যায়, সেই বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার প্রধান কারণগুলোও আলোচিত হয়েছে।
ক. খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ
খাদ্যে বিষক্রিয়াকে (ফুড পয়জনিং) বলা হয়।
প্রধান কারণ: ছত্রাক।
খ. খাদ্য নষ্টের কারণ
খাদ্য নষ্টের প্রধান কারণ তিনটি:
- জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক)
- এনজাইম (উৎসেচক)
- ধাতব আয়ন (ট্রেস এলিমেন্ট)
গ. খাদ্য পচনে সহায়ক পরিবেশ
- তাপমাত্রা: 30°C থেকে 45°C
- পানির উপস্থিতি
- অক্সিজেন
৩. খাদ্য সংরক্ষণ কৌশল
এই বিভাগে খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল, যেমন পানি সক্রিয়তা (Aw) নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার এবং তাদের অনুমোদিত মাত্রা (PPM) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ক. পানি সক্রিয়তা (Aw) ও সংরক্ষণ
খাদ্যবস্তু ভালো রাখতে পানির সক্রিয়তার মান 0.6 এর কম রাখা উচিত। বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় Aw মান নিচে চার্টে দেখানো হলো:
মনে রাখার কৌশল (ট্রিক)
নৌকা বাইস: ব্যাকটেরিয়া > ইস্ট > ছত্রাক (90 > 88 > 80)
খ. সংরক্ষণ পদ্ধতি
- শুষ্ককরণ (Drying): খাবার শুকিয়ে ফেলা (কেস হার্ডেনিং)। উদাহরণ: কিসমিস, শুটকি।
- শীতলীকরণ (Cooling):
- ফ্রিজিং: 0°C থেকে 4°C
- ডিপ ফ্রিজিং: -5°C থেকে -18°C (ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয়: -5°C থেকে -10°C)
গ. প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষক
- লবণ: কিউরিং (৭-৮% লবণ)। কাঁচা ফলমূলে ব্যবহৃত।
- চিনি: অসমোসিস (৬৫-৭০% দ্রবণ)। জ্যাম, জেলি, আচারে ব্যবহৃত।
- হলুদ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মাংসে ব্যবহৃত।
- সরিষার তেল: ব্যাকটেরিয়ারোধক। আচারে ব্যবহৃত।
- ভিনেগার: (৬-১০% অ্যাসিটিক এসিড)। পিকলিং এ ব্যবহৃত।
ঘ. কৃত্রিম/রাসায়নিক খাদ্য সংরক্ষক
অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল
- সোডিয়াম বেঞ্জোয়েট (pH < 4.5)
- নাইট্রেট ও নাইট্রাইট (মাংস)
- প্যারাবেন (ব্রেস্ট ক্যান্সার ঝুঁকি)
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- মুক্তমূলক শোষণকারী: BHA, BHT, TBHQ, PG
- অক্সিজেন শোষণকারী: ভিটামিন C, E, সালফাইড
কিলেটিং এজেন্ট
- ধাতব আয়নের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- উদাহরণ: EDTA
ঙ. অনুমোদিত মাত্রা (PPM)
বিভিন্ন রাসায়নিক সংরক্ষকের সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা (PPM - Parts Per Million) নিচে চার্টে তুলনা করা হলো।
৪. কৌটাচাতকরণ (Canning)
খাদ্যদ্রব্য, বিশেষ করে মাছ, মাংস এবং ফলমূল দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য ক্যানিং একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই বিভাগে ক্যানিং-এর দুটি প্রধান পদ্ধতি, বিভিন্ন খাদ্যের জন্য সংরক্ষণ মিশ্রণ এবং সম্পর্কিত পরিভাষাগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
ক্যানিং পদ্ধতি তুলনা
| বৈশিষ্ট্য | পানিস্ফুটন পদ্ধতি | চাপ কৌটাচাতকরণ পদ্ধতি |
|---|---|---|
| pH | 4.6 এর কম | 4.6 এর বেশি |
| তাপমাত্রা | 82°C থেকে 100°C | 115°C থেকে 121°C |
| চাপ | N/A | 10 থেকে 15 পাউন্ড |
| ব্যবহার | টক সবজি ও টক ফল | মাছ, মাংস, মটরশুটি |
কৌটাচাতকরণে সংরক্ষণ মিশ্রণ
- আম, আনারস (মিষ্টি): চিনি ৩০-৪০%, 0.25% সাইট্রিক এসিড।
- পেয়ারা (টক): চিনি ১০%, 0.06% সাইট্রিক এসিড + ভিটামিন C।
- কচি ভুট্টা ও মটর: ৫% চিনি, ২% লবণ।
- টমেটো (টক): ১০% লবণ, ৫% চিনি।
- মাছ মাংস: ২% লবণ, ২% চিনি।
গুরুত্বপূর্ণ টার্ম
- ব্লাঞ্চিং: ফুটন্ত পানিতে ফোটানো।
- অ্যাডজাস্টিং: কৌটা থেকে বায়ু বের করা।
- সিলিং: কৌটার মুখ বন্ধ করা।
- ফুড লেকার: ক্যানের ভেতরে রেজিনের প্রলেপ।
- মাছ সংরক্ষণ: জিংক অক্সাইড (ZnO) প্রলেপযুক্ত কৌটা মাছের বর্ণ উজ্জ্বল (জিংক সালফাইড গঠন) করে।
৫. দ্রবণ, কলয়েড ও সাসপেনশন
কণার আকারের উপর ভিত্তি করে মিশ্রণকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এই বিভাগে দ্রবণ, কলয়েড এবং সাসপেনশনের মধ্যকার বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য, কলয়েডের স্থায়িত্বের কারণ এবং কোয়াগুলেশন প্রক্রিয়া আলোচনা করা হয়েছে।
বৈশিষ্ট্যের তুলনা
| বৈশিষ্ট্য | দ্রবণ (Solution) | কলয়েড (Colloid) | সাসপেনশন (Suspension) |
|---|---|---|---|
| কণার ব্যাস (nm) | 0.1 থেকে 2 | 2 থেকে 500 | 500 এর বেশি |
| প্রকৃতি | সমসত্ত্ব | অসমসত্ত্ব | অসমসত্ত্ব |
| স্থিতি | সুস্থিত | সুস্থিত | অস্থায়ী |
| বিশেষ ধর্ম | কণা অদৃশ্য | ব্রাউনীয় গতি, টিন্ডাল প্রভাব | N/A |
| উদাহরণ | শরবত, গ্লুকোজ | দুধ, বাটার, জেলি | রক্ত, ওষুধ, BaSO4 |
কোয়াগুলেশন
কলয়েড কণাকে গুচ্ছ আকারে পৃথক করার প্রক্রিয়া। উদাহরণ: দুধ থেকে দই বা ছানা তৈরি।
হার্ডি শুলজের নীতি: যে আয়নের চার্জ যত বেশি, তার কোয়াগুলেশন ক্ষমতা তত বেশি।
Al3+ > Ba2+ > Na+
৬. দুধ ও মাখন
দুধ একটি সুষম খাদ্য যা ইমালশন প্রকৃতির। এই বিভাগে দুধের বিভিন্ন উপাদান, এর পিএইচ, প্রোটিন, শর্করা এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি (পাস্তুরাইজিং) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মাখনের পুষ্টিগুণ ও সংরক্ষণও এখানে অন্তর্ভুক্ত।
ক. দুধ সম্পর্কিত তথ্য
- প্রকৃতি: ইমালশন, পিএইচ: 6.6 - 6.9
- প্রধান উপাদান: পানি (৮২-৮৮%)
- শর্করা: ল্যাকটোজ (গ্লুকোজ + গ্যালাকটোজ)
- প্রধান প্রোটিন: কেজিন (ফসফো প্রোটিন)
- অন্যান্য প্রোটিন: হোয়ে প্রোটিন (ল্যাকটোঅ্যালবুমিন, ল্যাকটোগ্লোবিউলিন)
- প্রধান আয়ন: K, Ca, Cl
- ভিটামিন: ভিটামিন A বেশি, ভিটামিন C ফোটালে নষ্ট হয়।
- সংরক্ষণ: পাস্তুরাইজিং।
- pH নিয়ন্ত্রণ: সোডিয়াম বাইকার্বোনেট।
খ. মাখন
- লবণ (প্রিজারভেটিভ) মেশালে স্বাদ ও স্থায়িত্ব বাড়ে।
- সংরক্ষণ তাপমাত্রা: 10°C এর নিচে।
- ভিটামিন A এর উৎকৃষ্ট উৎস।
- খাদ্যমান: ৭৩০ কিলো ক্যালোরি / ১০০ গ্রাম।
৭. টয়লেট্রিজ ও পারফিউমারিজ
এই বিভাগে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী (টয়লেট্রিজ) এবং পরিষ্কারক (ক্লিনিং এজেন্ট) সমূহের প্রধান উপাদান ও কাজ বর্ণনা করা হয়েছে।
ট্যালকম পাউডার
উপাদান: ট্যালক (3MgO · 4SiO2 · H2O)
অ্যান্টিসেপটিক: জিংক স্টিয়ারেট
বেবি পাউডার
অ্যান্টিসেপটিক: বোরিক এসিড
ভ্যানিশিং ক্রিম
ইমালশন: তেল-ইন-ওয়াটার (পানি বেশি)
প্রিজারভেটিভ: মিথাইল প্যারাবেন
কোল্ড ক্রিম
লুব্রিকেন্ট: মিনারেল অয়েল
অ্যান্টিসেপটিক: বোরাক্স
আফটার শেভ লোশন
অ্যান্টিসেপটিক: ডিন্যাচার্ড অ্যালকোহল (40)
ময়েশ্চারাইজার: গ্লিসারিন
৮. ভিনেগার প্রস্তুতি
ভিনেগার (অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ৬-১০% জলীয় দ্রবণ) একটি জনপ্রিয় খাদ্য সংরক্ষক ও ফ্লেভারিং এজেন্ট। এখানে চিনি বা ফলমূল থেকে ভিনেগার প্রস্তুতির তিনটি প্রধান ধাপ বর্ণনা করা হয়েছে।
ভিনেগার প্রস্তুতির ধাপসমূহ
চিনি → গ্লুকোজ + ফ্রুকটোজ
(C12H22O11)
গ্লুকোজ → ইথানল
(CH3CH2OH)
ইথানল → অ্যাসিটিক এসিড
(CH3COOH)
গুরুত্বপূর্ণ: ইনভার্টেস ও জাইমেজ এনজাইম ইস্ট থেকে আসে। ইস্টের বৃদ্ধিতে অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ফসফেট সহায়তা করে।